ডিজনিল্যান্ড: কল্পনার রাজ্যে ইতিহাসের যাত্রা
স্বপ্নের জগৎ থেকে বাস্তবের মুগ্ধতা: ডিজনিল্যান্ডের ঐতিহাসিক যাত্রা
ডিজনিল্যান্ড, বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় বিনোদন পার্কগুলোর একটি, এমন একটি স্থান যা স্বপ্ন ও কল্পনাকে বাস্তবে রূপান্তর করেছে। ওয়াল্ট ডিজনি-এর অনন্য কল্পনার ফসল, এই বিনোদন পার্কটি শুধুমাত্র শিশুদের জন্য নয়, বরং সব বয়সের মানুষের জন্য এক অদ্ভুত মুগ্ধতার জগৎ। যদিও ডিজনিল্যান্ড ক্যালিফোর্নিয়ায় ১৯৫৫ সালে প্রথম খোলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এর শাখা রয়েছে।
তবে এই নিবন্ধে আমরা বিশেষভাবে ডিজনিল্যান্ডের সামগ্রিক ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করবো। এটি কীভাবে জন্ম নিয়েছিল, কীভাবে এটি একটি বৈশ্বিক আইকন হয়ে উঠেছে, এবং এটি কীভাবে মানুষকে তাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে মুক্তি দিতে সমর্থ হয়েছে।
ডিজনিল্যান্ডের আদর্শ ও উদ্ভব
ওয়াল্ট ডিজনি একজন জনপ্রিয় কার্টুনিস্ট ও প্রযোজক ছিলেন, যিনি মিকি মাউস, ডোনাল্ড ডাক এবং অন্যান্য অসংখ্য চরিত্রের মাধ্যমে শিশু ও বয়স্ক উভয়কেই আনন্দ দিয়েছিলেন। তবে ওয়াল্ট ডিজনির মনে সবসময়ই এমন একটি জায়গা তৈরি করার ইচ্ছা ছিল, যেখানে তার কার্টুন চরিত্রগুলো বাস্তবে জীবন পাবে। ১৯৩০-এর দশকে তিনি যখন তার দুই মেয়েকে বিভিন্ন পার্কে নিয়ে যেতেন, তখন তিনি লক্ষ্য করতেন যে অনেক পার্ক শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় হলেও, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য তেমন বিনোদনপূর্ণ নয়।
এর ফলে, ওয়াল্ট ডিজনি একটি বিনোদন পার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন, যেখানে শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ই একসাথে সময় কাটাতে পারবেন এবং মজার অভিজ্ঞতা নিতে পারবেন। এই ধারণার ভিত্তিতেই ডিজনিল্যান্ডের উদ্ভব হয়। ওয়াল্ট ডিজনি চেয়েছিলেন এমন একটি স্থান তৈরি করতে, যেখানে মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে মুক্তি পেতে পারবে এবং এক নতুন, রোমাঞ্চকর জগতে প্রবেশ করবে।
ডিজনিল্যান্ডের জন্ম
১৯৫২ সালে ওয়াল্ট ডিজনি তার স্বপ্নের বিনোদন পার্ক তৈরির পরিকল্পনা শুরু করেন। এই প্রকল্পের নামকরণ করা হয়েছিল “ডিজনিল্যান্ড।” ওয়াল্ট ডিজনি একটি বড় এলাকা খুঁজছিলেন, যেখানে তার কল্পিত ডিজনি রাজ্য তৈরি করতে পারবেন। লস এঞ্জেলেসের কাছে আনাহাইমে একটি বড় জায়গা পাওয়া যায়, এবং এখানেই ডিজনিল্যান্ড গড়ে তোলা হয়।
১৯৫৪ সালের জুলাই মাসে ডিজনিল্যান্ডের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এটি ছিল এক বিশাল প্রকল্প। পার্কটির বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন থিম তৈরি করা হয়েছিল, যেমন অ্যাডভেঞ্চারল্যান্ড, ফ্যান্টাসিল্যান্ড, ফ্রন্টিয়ারল্যান্ড এবং টুমোরোল্যান্ড। প্রতিটি থিম ছিল বিশেষভাবে পরিকল্পিত, যাতে দর্শকরা একটি সম্পূর্ণ নতুন জগতে প্রবেশ করার অনুভূতি পান।
ডিজনিল্যান্ডের উদ্বোধন
ডিজনিল্যান্ডের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ১৯৫৫ সালের ১৭ জুলাই। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন, এবং এটি সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়। সেই সময়ে এটি একটি বিপুল সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। তবে, উদ্বোধনের দিনে কিছু সমস্যাও ছিল, যেমন পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা না থাকা, অধিক গরম এবং দীর্ঘ লাইন।
তবুও, এই সমস্যাগুলি দ্রুত সমাধান করা হয়েছিল এবং ডিজনিল্যান্ড দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পার্কটির জনপ্রিয়তা এমন ছিল যে কয়েক মাসের মধ্যেই এটি আমেরিকার অন্যতম প্রধান পর্যটন গন্তব্য হয়ে ওঠে।
ডিজনিল্যান্ডের বৈশ্বিক বিস্তার
ডিজনিল্যান্ডের প্রথম সাফল্যের পর, ওয়াল্ট ডিজনি তার স্বপ্নকে আরও বড় করতে চেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন বিশ্বের অন্যান্য স্থানে এমন পার্ক তৈরি করতে, যা বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং অঞ্চলের মানুষের জন্য আকর্ষণীয় হবে। এর ফলে, ১৯৭১ সালে ফ্লোরিডায় ওয়াল্ট ডিজনি ওয়ার্ল্ড তৈরি করা হয়। এটি ছিল ডিজনিল্যান্ডের থেকে অনেক বড় এবং এতে আরও বেশি আকর্ষণীয় জায়গা ছিল।
এরপর, ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে ডিজনি থিম পার্ক তৈরি করা হয়। টোকিও ডিজনিল্যান্ড ১৯৮৩ সালে চালু হয়েছিল, যা এশিয়ার প্রথম ডিজনি পার্ক। পরে ১৯৯২ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে “ডিজনিল্যান্ড প্যারিস” চালু হয়। ২০০৫ সালে হংকং ডিজনিল্যান্ড এবং ২০১৬ সালে সাংহাই ডিজনিল্যান্ড চালু হয়, যা চীনের বাজারে ডিজনির বৃহৎ প্রবেশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
ডিজনিল্যান্ডের থিম পার্কের আকর্ষণ
ডিজনিল্যান্ডের মূল আকর্ষণ ছিল এর বিভিন্ন থিম এবং রাইড। প্রতিটি থিম পার্কে ওয়াল্ট ডিজনির কার্টুন চরিত্রগুলোকে জীবন্ত করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ফ্যান্টাসিল্যান্ডে দর্শকরা স্নো হোয়াইট, সিন্ডারেলা, পিটার প্যান এবং অন্যান্য কল্পকাহিনীর চরিত্রের সাথে মেতে উঠতে পারেন। অ্যাডভেঞ্চারল্যান্ডে দর্শকরা জঙ্গলের রোমাঞ্চকর পরিবেশে ভ্রমণ করতে পারেন, যেখানে আছে “জাঙ্গল ক্রুজ” নামে একটি জনপ্রিয় রাইড।
টুমোরোল্যান্ড, নাম থেকেই বোঝা যায়, ভবিষ্যতের থিম নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এখানে দর্শকরা বিভিন্ন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের রাইড উপভোগ করতে পারেন, যেমন “স্পেস মাউন্টেন” যা ভবিষ্যতের মহাকাশ ভ্রমণের থিম নিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
ডিজনিল্যান্ডের প্রভাব
ডিজনিল্যান্ড কেবল একটি বিনোদন পার্কই নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক আইকন। এটি মানুষের কল্পনাশক্তিকে জাগিয়ে তুলেছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে একটি মুগ্ধতার প্রভাব ফেলেছে। ডিজনিল্যান্ড শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের জন্যই স্বপ্নের স্থান হয়ে উঠেছে। এটি একটি এমন জায়গা যেখানে মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনের চাপ থেকে মুক্তি পেতে এবং একটি নতুন জগতে প্রবেশ করতে পারে।
ডিজনিল্যান্ডের সাফল্যের একটি বড় কারণ হলো এর মানসম্পন্ন পরিষেবা এবং দর্শকদের প্রতি ভালোবাসা। এখানে দর্শকদের এমনভাবে আপ্যায়ন করা হয় যাতে তারা সবসময় স্মরণীয় অভিজ্ঞতা পান। ডিজনিল্যান্ডে কাজ করা প্রতিটি কর্মী বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত হন যাতে তারা দর্শকদের সেরা অভিজ্ঞতা প্রদান করতে পারেন।
ডিজনিল্যান্ডের ভবিষ্যৎ
ডিজনিল্যান্ডের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল। বর্তমানে এটি ডিজনি কর্পোরেশনের অন্যতম প্রধান সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়, এবং এর জনপ্রিয়তা ক্রমবর্ধমান। ডিজনিল্যান্ডের নতুন নতুন থিম পার্ক ও রাইড যুক্ত করার পরিকল্পনা চলছে, যাতে এটি আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। প্রযুক্তিগত উন্নতি এবং ডিজনির নতুন চলচ্চিত্র ও চরিত্রগুলোর মাধ্যমে ডিজনিল্যান্ড আরও বেশি আধুনিক এবং বৈশ্বিক দর্শকদের জন্য প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে।
ডিজনিল্যান্ড এমন একটি স্থান হয়ে থাকবে, যা মানুষকে তাদের স্বপ্নের জগতে নিয়ে যেতে এবং তাদের জীবনে কিছুটা হলেও আনন্দ দিতে সক্ষম হবে।
ডিজনিল্যান্ডের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন
ডিজনিল্যান্ড শুধুমাত্র থিম এবং গল্প বলার জন্য নয়, এর প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং সৃজনশীলতাও দর্শকদের মুগ্ধ করে। সময়ের সাথে সাথে ডিজনিল্যান্ড তার প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়িয়েছে এবং বিনোদনের নতুন মাত্রা তৈরি করেছে। এই উন্নত প্রযুক্তিগুলো ডিজনির থিম পার্কগুলোকে শুধুমাত্র ভ্রমণ অভিজ্ঞতার বাইরে নিয়ে গেছে এবং রাইডগুলোকে জীবন্ত ও বাস্তবসম্মত করে তুলেছে।
একটি উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবন হলো “অ্যানিমেট্রনিক্স”। ডিজনিল্যান্ডে এটি প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল, যেখানে রোবটিক্সের মাধ্যমে ডিজনির জনপ্রিয় চরিত্রগুলোকে জীবন্ত করা হয়। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্নো হোয়াইট, পিটার প্যানের মতো চরিত্রগুলোকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যাতে তারা দর্শকদের সামনে চলাফেরা এবং কথা বলতে পারে। “পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান” বা “হন্টেড ম্যানশন” এর মতো রাইডগুলোতে এই প্রযুক্তি দর্শকদের মুগ্ধ করে চলেছে।
অপরদিকে, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি (AR) প্রযুক্তি ডিজনিল্যান্ডের ভবিষ্যত পরিকল্পনার একটি বড় অংশ। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দর্শকরা বিভিন্ন রাইডে বাস্তবতার অনুভূতি পাবেন, এমনকি বাড়িতে বসে ডিজনিল্যান্ডে প্রবেশের অভিজ্ঞতাও নেওয়া সম্ভব হবে। ২০১৯ সালে চালু হওয়া “স্টার ওয়ার্স: গ্যালাক্সি’স এজ” এ অত্যাধুনিক ইন্টারেক্টিভ রাইডগুলোতে এই প্রযুক্তির ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়।
এছাড়াও, ডিজনিল্যান্ডে পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তির উপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী রাইড থেকে শুরু করে পুনঃব্যবহারযোগ্য উপকরণ এবং সৌর শক্তি ব্যবহার করে পার্ক পরিচালনার চেষ্টা চলছে। ডিজনিল্যান্ড সবসময় উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ব্যবহার করে এগিয়ে থাকতে চেয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার লক্ষ্য রয়েছে।
ডিজনিল্যান্ডের সাংস্কৃতিক প্রভাব এবং বৈশ্বিক উত্তরাধিকার
ডিজনিল্যান্ডের সাংস্কৃতিক প্রভাব বিশাল এবং বৈশ্বিক। এটি কেবল বিনোদন পার্ক হিসেবেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি বিশ্বজুড়ে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের কল্পনা ও স্বপ্নের জগতে প্রবেশের এক প্রধান মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডিজনিল্যান্ডের চরিত্রগুলো এবং গল্পগুলো এতটাই প্রভাবশালী যে তারা বিশ্বব্যাপী সংস্কৃতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছে। মিকি মাউস, ডোনাল্ড ডাক, গুফি এবং অন্যান্য ডিজনি চরিত্রগুলো আজও জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে এবং তারা একটি সময়কালীন সাংস্কৃতিক প্রতীক হয়ে উঠেছে।
ডিজনিল্যান্ডের বৈশ্বিক উত্তরাধিকার শুধু বিনোদন ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি একটি সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলন তৈরি করেছে, যা সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন, এবং আনন্দের মাধ্যমে মানুষকে একত্রিত করেছে।
ডিজনিল্যান্ডের স্থাপত্য ও নকশার বৈচিত্র্য
ডিজনিল্যান্ড কেবল রাইড ও আকর্ষণীয় চরিত্রগুলোর জন্যই নয়, এর অনন্য স্থাপত্য ও নকশার জন্যও বিশ্বব্যাপী পরিচিত। প্রতিটি ডিজনি পার্কের স্থাপত্যে এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা দর্শকদের কল্পনার জগতে নিয়ে যায়। ওয়াল্ট ডিজনি এবং তার টিম প্রতিটি অংশকে এমনভাবে তৈরি করেছেন, যাতে প্রতিটি থিম তার নিজস্ব বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে দাঁড়ায়।
মেইন স্ট্রিট, ইউএসএ ডিজনিল্যান্ডের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ, যা আমেরিকার একটি ছোট শহরের প্রতিরূপ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। এই এলাকায় দর্শকরা বিভিন্ন দোকানপাট ও পুরনো আমলের আর্কিটেকচার দেখতে পান, যা আমেরিকার ১৯ শতকের ছোট শহরের দৃশ্য ধারণ করে। এখানেই দর্শকরা প্রথম প্রবেশ করে এবং এখান থেকে পার্কের অন্যান্য থিমযুক্ত অংশে যাত্রা শুরু করেন।
ফ্যান্টাসিল্যান্ড এর স্থাপত্য হলো মধ্যযুগীয় কল্পনার বাস্তবায়ন। স্নো হোয়াইটের দুর্গ, সিন্ডারেলার প্রাসাদ—প্রতিটি জায়গায় দর্শকরা কল্পকাহিনীর জগতে হারিয়ে যান। এই থিমের ডিজাইনে মধ্যযুগীয় ইউরোপের দুর্গ, রাজপ্রাসাদ এবং গ্রামের প্রভাব স্পষ্টভাবে লক্ষণীয়।
অ্যাডভেঞ্চারল্যান্ড এর নকশায় ভিন্ন ধরনের স্থানীয় প্রভাব দেখা যায়। এখানে আফ্রিকান, দক্ষিণ আমেরিকান এবং এশীয় স্থাপত্যের মিশ্রণ রয়েছে। যেমন, “জাঙ্গল ক্রুজ” রাইডে দর্শকরা এক আদিম জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে রোমাঞ্চকর যাত্রা করেন। এটি ডিজাইন করা হয়েছে যাতে দর্শকরা জঙ্গল অভিযানের প্রকৃত অভিজ্ঞতা পান।
টুমোরোল্যান্ড পার্কের ভবিষ্যত থিমকে ধারণ করে। এর নকশায় আধুনিক ও ভবিষ্যতধর্মী আর্কিটেকচার এবং প্রযুক্তির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন রাইড ও ভবনগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে মনে হয় যেন দর্শকরা ভবিষ্যতের শহরে প্রবেশ করছেন।
ডিজনিল্যান্ডের প্রতিটি অংশের স্থাপত্য এবং নকশা শুধুমাত্র থিমের সাথে মানানসই নয়, এটি দর্শকদের মনস্তাত্ত্বিকভাবে ভিন্ন জগতে প্রবেশের অনুভূতিও দেয়। বিভিন্ন থিমের সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্থাপত্যের এই বৈচিত্র্য ডিজনিল্যান্ডকে অনন্য করে তুলেছে।
ডিজনিল্যান্ডে খাবার ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য
ডিজনিল্যান্ড কেবল রাইড বা থিম পার্কের জন্যই নয়, খাবারের ক্ষেত্রেও সমানভাবে আকর্ষণীয়। এখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের খাবারের বৈচিত্র্য দর্শকদের ভ্রমণের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে তোলে। প্রতিটি থিম প্যাভিলিয়নে এর সাথে মানানসই খাবার পাওয়া যায়, যা ঐ এলাকার সংস্কৃতির প্রতিফলন করে।
অ্যাডভেঞ্চারল্যান্ড এ আফ্রিকান ও দক্ষিণ আমেরিকান খাবারের বৈচিত্র্য রয়েছে, যেখানে দর্শকরা এক্সোটিক ফ্লেভার উপভোগ করতে পারেন। এখানে টিকি বার্গার বা তাজা ফলের জুস জনপ্রিয়।
ফ্যান্টাসিল্যান্ড এ ইউরোপীয় স্টাইলের খাবার যেমন বাভারিয়ান প্রেটজেল, জার্মান সসেজ ইত্যাদি পাওয়া যায়। এছাড়া সিন্ডারেলার রাজকীয় ভোজের জন্য বিশেষভাবে থিমযুক্ত রেস্তোরাঁ রয়েছে, যেখানে অতিথিরা এক রাজকীয় অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারেন।
টুমোরোল্যান্ড এ ভবিষ্যতধর্মী থিমের সাথে মিলে খাবারের পরিবেশনেও নতুনত্ব আনা হয়েছে। এখানে পাওয়া যায় “গ্যালাক্সি বার্গার” বা “স্পেস মিল্কশেক,” যা থিমের সাথে একেবারে মানানসই।
খাবার এবং পানীয়ের বৈচিত্র্য ডিজনিল্যান্ডে আরও একটি আকর্ষণীয় দিক যোগ করেছে। এখানকার প্রতিটি খাবার দর্শকদের শুধু রুচি মেটাতে নয়, বরং পার্কের থিম এবং সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ত করতে সহায়ক।
ডিজনিল্যান্ডে পরিবেশ সুরক্ষা উদ্যোগ
ডিজনিল্যান্ড শুধু মজা ও বিনোদনের স্থান নয়, এটি পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ডিজনিল্যান্ডের মালিক প্রতিষ্ঠান ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানি তাদের পার্কগুলোতে পরিবেশগত সুরক্ষার গুরুত্বকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয় এবং এ জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
প্রথমত, ডিজনিল্যান্ড বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদের সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ ও পানির সংরক্ষণে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। পার্কের বিভিন্ন স্থানে সৌরশক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, বিশেষ করে ক্যালিফোর্নিয়ার ডিজনিল্যান্ডে সৌর প্যানেলের মাধ্যমে প্রচুর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এছাড়াও, পার্কের রাইডগুলোতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, ডিজনিল্যান্ডে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পুনঃব্যবহারযোগ্য উপকরণ ব্যবহার করা হয়। প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর জন্য ডিজনিল্যান্ডের রেস্তোরাঁগুলোতে পুনঃব্যবহারযোগ্য থালা-বাসন ও কাঁচের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে বিশেষভাবে আলাদা করা ডাস্টবিন রাখা হয়েছে।
ডিজনিল্যান্ডে পরিবেশ বান্ধব কার্যক্রম এবং পরিবেশ সুরক্ষায় গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি তাদের সামাজিক দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট।
উপসংহার
ডিজনিল্যান্ড একটি রূপকথার মতোই শুরু হয়েছিল, যেখানে ওয়াল্ট ডিজনির কল্পনা ও সৃজনশীলতা মিলে গিয়ে একটি বাস্তবতা তৈরি করেছিল। এটি ছিল একটি স্বপ্ন, যা বাস্তবে রূপ নিয়েছিল এবং তা সময়ের সাথে আরও বড় ও বিস্তৃত হয়েছে।
Thank you for registering – it was incredible and pleasant all the best http://yandex.ru ladonna cucumber