পরিচিতি
“ইন্টারস্টেলার” হল ক্রিস্টোফার নোলান পরিচালিত একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী চলচ্চিত্র যা ২০১৪ সালে মুক্তি পায়। এই চলচ্চিত্রটি সময়, স্থান এবং মানবতার একটি মহাকাব্যিক গল্প বলেছে যা দর্শকদের মুগ্ধ করেছে এবং চিন্তার খোরাক দিয়েছে।
গল্পের সূচনা
গল্পটি শুরু হয় পৃথিবীতে, যেখানে পরিবেশ বিপর্যয় ও খাদ্য সংকটের কারণে মানবতা বিলুপ্তির মুখোমুখি। পৃথিবীর ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং মানুষের টিকে থাকার সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে। প্রধান চরিত্র, কুপার, একজন প্রাক্তন নাসা পাইলট, এখন একজন কৃষক। তার দুই সন্তান মুর্ফ ও টমের সাথে তিনি একটি খামারে বসবাস করছেন। মুর্ফ একটি অদ্ভুত গ্র্যাভিটেশনাল ঘটনা আবিষ্কার করে, যা তাদের নাসার একটি গোপন বেসে নিয়ে যায়।
নাসার গোপন মিশন
নাসার বিজ্ঞানী ড. ব্র্যান্ড এবং তার দল একটি পরিকল্পনা করছেন যা মানবতার টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য। তারা “ল্যাজারাস মিশন” নামক একটি প্রকল্পের মাধ্যমে মহাকাশে ১২টি সম্ভাব্য বসবাসযোগ্য গ্রহে মহাকাশচারী পাঠিয়েছেন। কিন্তু এই মিশন সফল হলে মানবতা নতুন বাসস্থান খুঁজে পাবে। কুপারকে ড. ব্র্যান্ড অনুরোধ করেন এই মিশনে যোগ দেওয়ার জন্য, যা পৃথিবীর বাইরে বসবাসযোগ্য গ্রহ খুঁজে বের করার উদ্দেশ্যে। কুপার তার সন্তানদের রেখে মহাকাশে যাত্রা করেন, যদিও এটি তার পরিবারের সাথে সময় কাটানোর শেষ সুযোগ হতে পারে।
মহাকাশে অভিযান
কুপার, ড. ব্র্যান্ডের মেয়ে অ্যামেলিয়া, রোমিলি, এবং ডয়েল সহ একটি দল মহাকাশযান “এন্ড্যুরেন্স”-এ চড়ে যাত্রা শুরু করেন। তাদের প্রথম গন্তব্য একটি ওয়ার্মহোল, যা তাদের অন্য গ্যালাক্সিতে নিয়ে যাবে। তারা প্রথমে মিলার গ্রহে পৌঁছায়, যা একটি জলময় গ্রহ। কিন্তু এখানে সময়ের পরিবর্তন একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তারা এখানে এক ঘণ্টা কাটালেও পৃথিবীতে সাত বছর পেরিয়ে যায়। এই অভিযানের সময় ডয়েল মারা যায় এবং তারা মূল্যবান সময় ও সম্পদ হারায়।
পরবর্তী গন্তব্য এবং নতুন চ্যালেঞ্জ
দলটি এরপর ম্যান গ্রহে পৌঁছায়, যেখানে ড. ম্যান নামে একজন বিজ্ঞানী আগে থেকেই আছেন। কিন্তু ম্যান তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেন এবং কুপারকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেন। কুপার কোনওমতে বেঁচে ফিরে আসেন এবং ম্যানের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এই অভিযানের সময় রোমিলিও মারা যান।
ব্ল্যাক হোল এবং টাইম ডিলেশন
এখন তাদের একমাত্র সুযোগ হলো ইডমন্ডস গ্রহে পৌঁছানো। কুপার এবং অ্যামেলিয়া একটি ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি আসতে বাধ্য হন, যা সময়ের একটি বড় পরিবর্তন ঘটায়। কুপার ব্ল্যাক হোলে প্রবেশ করেন এবং একটি পঞ্চম মাত্রার (ফিফথ ডাইমেনশন) জায়গায় পৌঁছান যেখানে সময় একটি শারীরিক রূপ ধারণ করে।
সমাধান এবং ফিরে আসা
এই পঞ্চম মাত্রায় কুপার দেখতে পান যে, তিনি মুর্ফের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন এবং ভবিষ্যতের তথ্য তাকে পৌঁছাতে পারেন। তিনি মুর্ফকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাঠিয়ে দেন যা মানবতার ভবিষ্যৎ বাঁচাতে সক্ষম। মুর্ফ এই তথ্য ব্যবহার করে পৃথিবীর সমস্যা সমাধান করেন এবং মানুষের জন্য একটি নতুন বাসস্থান তৈরির উপায় খুঁজে পান।
ফেরত আসা এবং পুনর্মিলন
কুপারকে শেষ পর্যন্ত ব্ল্যাক হোল থেকে উদ্ধার করা হয় এবং তিনি নতুন মহাকাশ স্টেশনে ফিরে আসেন। সেখানে তিনি দেখতে পান যে, তার মেয়ে মুর্ফ এখন একজন বয়স্ক মহিলা এবং তিনি পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য একটি নায়ক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। মুর্ফ তার বাবার সাথে শেষ দেখা করতে চান এবং তাকে অনুরোধ করেন যাতে তিনি অ্যামেলিয়াকে খুঁজে বের করেন, যিনি ইডমন্ডস গ্রহে রয়েছেন।
উপসংহার
কুপার একটি মহাকাশযানে চড়ে অ্যামেলিয়াকে খুঁজতে বের হন, যারা এখন ইডমন্ডস গ্রহে বসবাস করছে। “ইন্টারস্টেলার” একটি চমৎকার এবং গভীর ভাবে চিন্তা প্ররোচক চলচ্চিত্র, যা আমাদের সময়, স্থান এবং মানবতার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শেখায়। এটি বিজ্ঞান এবং আবেগের একটি সুন্দর মিশ্রণ যা দর্শকদের মনে গভীর ছাপ ফেলে।
“ইন্টারস্টেলার” কেবল একটি সিনেমা নয়, এটি একটি সময়, স্থান এবং মানবতার প্রতি আমাদের গভীর সম্পর্কের প্রতিচ্ছবি। এই চলচ্চিত্রটি দেখায় কিভাবে মানুষের অধ্যবসায় এবং ভালোবাসা আমাদেরকে অসম্ভবকে সম্ভব করার পথে পরিচালিত করতে পারে।