History

নেলসন ম্যান্ডেলা: একজন মহাত্মা ও মুক্তিযোদ্ধার জীবনকথা

নেলসন ম্যান্ডেলা, যিনি ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট এবং বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামের অন্যতম প্রধান প্রতীক, ইতিহাসের পাতায় তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তাঁর জীবনের কাহিনী শুধুমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকাই নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি অনুপ্রেরণার উৎস।

জন্ম ও শৈশবকাল

নেলসন ম্যান্ডেলা জন্মগ্রহণ করেন ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার ম্ভেজো গ্রামে। তার পুরো নাম ছিল রোলিহ্লাহলা ম্যান্ডেলা। “রোলিহ্লাহলা” অর্থ “গাছের ডাল ভাঙা,” কিন্তু স্থানীয় ভাষায় এর অর্থ হচ্ছে “সমস্যা সৃষ্টিকারী।” এই নামটিই যেন তার ভবিষ্যৎ জীবনকে পূর্বাভাস করেছিল।

ম্যান্ডেলা ছিলেন থেম্বু রাজবংশের একজন সদস্য, এবং তার পরিবার তাকে ঐতিহ্যগত জ্ঞান ও সংস্কৃতিতে শিক্ষিত করেছিল। শৈশবে তিনি স্থানীয় বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং তার শিক্ষক তাকে “নেলসন” নামটি দেন, যা তার ইংরেজি শিক্ষার সময়কার একটি অভ্যাস ছিল।

শিক্ষাজীবন ও প্রথমদিকের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড

নেলসন ম্যান্ডেলার শিক্ষাজীবন এবং প্রথম দিকের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তার ভবিষ্যতের বিপ্লবী নেতৃত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময়, ম্যান্ডেলা কেবলমাত্র একজন সাধারণ ছাত্র ছিলেন না; তিনি ছিলেন এক সক্রিয় চিন্তাবিদ, যিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সমাজের গভীর অসাম্য এবং বর্ণবৈষম্যের পরিস্থিতি সম্পর্কে তীব্রভাবে সচেতন হয়ে ওঠেন। এই সময়েই তিনি ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে শুরু করেন। ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম প্রধান উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এবং এখানেই তিনি প্রথম রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।

ম্যান্ডেলার রাজনৈতিক চেতনা তাকে ঐ সময়কার বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলনে জড়িয়ে ফেলে। তিনি ছাত্র সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য পরিচিতি লাভ করেন। তবে তার এই রাজনৈতিক সক্রিয়তার কারণে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে, ম্যান্ডেলা শিক্ষাজীবন চালিয়ে যাওয়ার জন্য জোহানেসবার্গে চলে আসেন, যেখানে তিনি পরবর্তীতে উইটওয়াটার্সর‌্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশাস্ত্রে পড়াশোনা শুরু করেন।

জোহানেসবার্গে আসার পর, ম্যান্ডেলার জীবন একটি নতুন মোড় নেয়। এখানে তিনি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি)-এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হন। এএনসি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল, যা কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করছিল। ম্যান্ডেলা এই দলে যোগদানের মাধ্যমে বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে তার লড়াইকে আরও সংগঠিত ও গতিশীল করেন।

১৯৪৪ সালে, ম্যান্ডেলা ও তার কয়েকজন সহকর্মী এএনসি যুবলীগ (এএনসি ইয়ুথ লিগ) প্রতিষ্ঠা করেন। যুবলীগ ছিল একটি কট্টরপন্থী সংগঠন, যা দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য নতুন কৌশল ও কর্মসূচি গ্রহণ করে। এই সময়ে, ম্যান্ডেলা কেবলমাত্র একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে নয়, বরং একজন সংগ্রামী নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন।

ম্যান্ডেলার এই সময়কার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তার পরবর্তী জীবনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি স্থাপন করে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বা আইনি প্রক্রিয়া দিয়ে বর্ণবৈষম্য দূর করা সম্ভব নয়; বরং এজন্য প্রয়োজন ছিল সুসংগঠিত ও কার্যকরী আন্দোলন। এজন্যই তিনি ১৯৫২ সালে এএনসির নেতৃত্বে ডিফিয়েন্স ক্যাম্পেইন (Defiance Campaign) পরিচালনা করেন, যা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে প্রথম বড় আকারের অসহযোগ আন্দোলন।

এই সময়ে ম্যান্ডেলা জোহানেসবার্গে তার আইনশাস্ত্রের পড়াশোনা চালিয়ে যান এবং তার বন্ধু অলিভার ট্যাম্বোর সাথে মিলে একটি আইনজীবী ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের ফার্ম ছিল দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম কৃষ্ণাঙ্গদের দ্বারা পরিচালিত আইনজীবী ফার্ম, যেখানে তারা মূলত গরিব কৃষ্ণাঙ্গদের আইনি সহায়তা প্রদান করতেন।

এই সময়কালেই ম্যান্ডেলা একজন জাতীয় পর্যায়ের নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র হয়ে ওঠেন।

এএনসি এবং বর্ণবৈষম্যবিরোধী আন্দোলন

ম্যান্ডেলা ১৯৪৪ সালে এএনসি’র যুব শাখা প্রতিষ্ঠা করেন এবং বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নতুন গতিশীলতা আনেন। ১৯৪৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় আসে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ণবৈষম্য নীতিকে (আপার্টহেইড) প্রতিষ্ঠিত করে। এই নীতি ছিল কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য নিষ্ঠুর এবং অত্যাচারী।

ম্যান্ডেলা ও তার সহকর্মীরা এই বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলনটি ধীরে ধীরে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে ম্যান্ডেলা এক প্রতীক হিসেবে দাঁড়ান।

গ্রেপ্তার ও কারাজীবন

১৯৬২ সালে ম্যান্ডেলাকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় এবং ১৯৬৪ সালে তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। তিনি রোবেন দ্বীপের কারাগারে ২৭ বছর কাটান। কারাগারে থাকাকালীনও তিনি বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যান এবং এই সময়ে তিনি বিশ্বজুড়ে স্বাধীনতা ও মানবাধিকার আন্দোলনের এক প্রতীক হয়ে ওঠেন।

নেলসন ম্যান্ডেলার জীবনযাত্রার একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হলো তার গ্রেপ্তার এবং দীর্ঘ ২৭ বছরের কারাবাস, যা তাকে দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাধীনতা আন্দোলনের এক অমর প্রতীকে পরিণত করেছে। তার এই কারাজীবন ছিল বর্ণবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের জন্য একটি যুগান্তকারী অধ্যায়, যেখানে তিনি শুধু দক্ষিণ আফ্রিকায় নয়, বরং সমগ্র বিশ্বে বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতীক হয়ে ওঠেন।

গ্রেপ্তার এবং বিচার

ম্যান্ডেলা ১৯৬১ সালে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের (এএনসি) সহ-প্রতিষ্ঠিত সশস্ত্র শাখা উমখন্তো ওয়েসিজওয়ে (MK) এর নেতৃত্ব দেন। এই শাখা দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার ও বর্ণবাদী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সরকারের কঠোর দমনমূলক নীতির মুখোমুখি হয়ে, ম্যান্ডেলা ও তার সহযোদ্ধারা বুঝতে পারেন যে, শান্তিপূর্ণ উপায়ে এই শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। সুতরাং, তারা সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করেন, যার ফলে ম্যান্ডেলা দেশটির শাসকদের কাছে “রাষ্ট্রদ্রোহী” হিসেবে চিহ্নিত হন।

১৯৬২ সালে ম্যান্ডেলাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং রাষ্ট্রদ্রোহ, ষড়যন্ত্র, এবং বিদেশী শক্তির সাথে যোগাযোগের অভিযোগে বিচার করা হয়। এই সময়ে তিনি “মাদিবা” নামে পরিচিত হন, যা তার গোত্রীয় নাম এবং দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণের মধ্যে একটি সম্মানসূচক উপাধি।

১৯৬৪ সালে ম্যান্ডেলা এবং তার কয়েকজন সহযোদ্ধাকে রিভোনিয়া বিচারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই বিচার প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হয়েছিল এবং বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার কর্মীরা ম্যান্ডেলা ও তার সহযোদ্ধাদের মুক্তির জন্য আন্দোলন শুরু করেন। রিভোনিয়া বিচারে ম্যান্ডেলার দেয়া বক্তব্য ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, “আমি বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, এবং আমি একটি গণতান্ত্রিক ও মুক্ত সমাজের স্বপ্ন দেখেছি, যেখানে সকল মানুষ সমান অধিকার ও সুযোগ নিয়ে বসবাস করবে। এটাই এমন একটি আদর্শ যা আমার জন্য বাঁচার মতো মূল্যবান, এবং যদি প্রয়োজন হয়, আমি এর জন্য মরতেও প্রস্তুত।”

কারাজীবন

ম্যান্ডেলা তার কারাজীবনের প্রথম ১৮ বছর কাটান কুখ্যাত রোবেন দ্বীপের কারাগারে, যা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে কঠিন এবং নির্জন কারাগারগুলির একটি। এখানে তিনি কঠোর পরিশ্রম করতে বাধ্য হন, এবং তাকে বিচ্ছিন্নভাবে রাখা হয় যাতে তিনি বাইরের বিশ্বের সাথে যোগাযোগ করতে না পারেন। রোবেন দ্বীপে থাকাকালীন ম্যান্ডেলা এবং তার সহযোদ্ধারা নির্যাতন, শারীরিক পরিশ্রম এবং মানসিক চাপে দিন কাটাতেন, তবে তারা কখনও তাদের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি।

রোবেন দ্বীপে তার থাকার সময়, ম্যান্ডেলা নিজের শারীরিক ও মানসিক শক্তি বাড়ানোর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করতেন এবং অন্যান্য বন্দিদেরকে উজ্জীবিত করতেন। তিনি নিজে পড়াশোনা চালিয়ে যান এবং কারাগারে অন্য বন্দিদের শিক্ষিত করার চেষ্টা করতেন। রোবেন দ্বীপের কারাগারটি ম্যান্ডেলার জন্য একটি কঠিন পরীক্ষা ছিল, কিন্তু তিনি কখনও হার মানেননি। বরং এই সময়ে তিনি আরও দৃঢ় সংকল্প নিয়ে তার লড়াই চালিয়ে যান।

১৯৮২ সালে ম্যান্ডেলাকে রোবেন দ্বীপ থেকে পোলস্মুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এখানে তিনি তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থায় ছিলেন, তবে এখনও তার সাথে কোনো ধরনের রাজনৈতিক আলোচনা করতে দেওয়া হয়নি। ১৯৮৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট পি.ডব্লিউ. বোথা ম্যান্ডেলাকে মুক্তি দিতে প্রস্তাব করেন, তবে শর্ত ছিল যে তিনি সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগ করবেন। ম্যান্ডেলা এই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন, কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন যে সশস্ত্র সংগ্রাম ছিল বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি অপরিহার্য উপাদান।

মুক্তির পথ

১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তিত হতে শুরু করে। আন্তর্জাতিকভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের ওপর চাপ বাড়তে থাকে এবং দেশের অভ্যন্তরে গণআন্দোলন তীব্র হয়। এই পরিস্থিতিতে সরকার ম্যান্ডেলার সাথে আলোচনা শুরু করতে বাধ্য হয়।

১৯৮৯ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন প্রেসিডেন্ট এফ.ডব্লিউ. ডি ক্লার্ক ম্যান্ডেলার সাথে বৈঠক করেন এবং অবশেষে ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ম্যান্ডেলাকে মুক্তি দেওয়া হয়। তার মুক্তির ঘটনাটি বিশ্বজুড়ে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হয়, যা কেবলমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শাসনের পতনের সূচনা করেছিল না, বরং বিশ্বজুড়ে বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠেছিল।

কারাজীবনের প্রভাব

ম্যান্ডেলার ২৭ বছরের কারাজীবন তাকে আন্তর্জাতিক এক আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তার ধৈর্য, দৃঢ় সংকল্প, এবং মানুষের প্রতি গভীর বিশ্বাস তাকে একজন অনন্য নেতা হিসেবে গড়ে তুলেছিল। এই সময়ে তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, দক্ষিণ আফ্রিকার সমস্যার সমাধান শুধুমাত্র সহিংসতার মাধ্যমে নয়, বরং আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব।

কারাগার থেকে মুক্তির পর ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকায় শান্তি ও পুনর্মিলনের জন্য কাজ করেন, যা দেশটির ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। ১৯৯৪ সালে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন এবং তার নেতৃত্বে দেশটি একটি নতুন গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হয়।

ম্যান্ডেলার কারাজীবন তার ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল, যা তাকে একটি মহান নেতায় পরিণত করেছিল। তার জীবনের এই অধ্যায়টি আমাদের শেখায় যে, ধৈর্য, ন্যায়বিচার, এবং মানবাধিকারের জন্য সংগ্রাম কখনও বৃথা যায় না।

মুক্তি এবং রাষ্ট্রপতি হওয়া

বিশ্বজুড়ে আন্দোলন ও চাপের কারণে ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ম্যান্ডেলাকে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তির পর তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবৈষম্য অবসানের জন্য আলোচনা শুরু করেন। ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং ম্যান্ডেলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

তিনি ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে যা সকলের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করে।

ম্যান্ডেলার জীবন ও উত্তরাধিকার

নেলসন ম্যান্ডেলা ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর ৯৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তার জীবনের সংগ্রাম ও আদর্শ আজও বিশ্বের জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে আছে।

ম্যান্ডেলার জীবন আমাদের শেখায় যে, সমতা, স্বাধীনতা, এবং মানবাধিকারের জন্য সংগ্রাম কখনও বৃথা যায় না। তার প্রতিটি পদক্ষেপই আমাদের মনে করিয়ে দেয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহসই আমাদের সঠিক পথের দিশা দেখায়।

উপসংহার

নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন একটি জীবন্ত কিংবদন্তি, যার জীবনের প্রতিটি অধ্যায় আমাদেরকে শান্তি, সমতা, এবং ন্যায়বিচারের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রাখতে শেখায়। তাঁর সংগ্রামী জীবন কেবলমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণকেই নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের নিপীড়িত মানুষদের মুক্তির প্রেরণা জুগিয়েছে। আজও তাঁর নাম উচ্চারণের সাথে সাথে আমরা যে মহান আত্মত্যাগ এবং সাহসের গল্প শুনি, তা আমাদের মন ও চেতনাকে আলোকিত করে তোলে।

Md Sakib Khan

আমি মো. সাকিব হোসেন, যশোরের নার্সিং ও মিডওাইফারি কলেজের ছাত্র। লেখালেখির প্রতি আমার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে, যা আমাকে বিভিন্ন বিষয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে এবং সৃজনশীলভাবে চিন্তা করতে সহায়তা করে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button